বেড়াতে যেতে পছন্দ করেন, কিন্তু গাড়িতে চড়ার কথা ভাবলেই বিভীষিকা মনে হয়- এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। এর কারণ আর কিছুই নয়, গাড়ি চড়লেই শুরু হয় বমি আর মাথা ঘোরা। মেডিকেলের ভাষায় এই সমস্যার নাম “মোশন সিকনেস” বা “কাইনেটোসিস”। আজকের ফিচারে জানাবো গাড়িতে উঠে বমি ভাব কেন হয় এবং কীভাবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

মোশন সিকনেস কী?

নামের সাথে মোশন শব্দটি থাকায় অনেকেই নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এই সমস্যাটির সাথে বাস, প্রাইভেট কার, এরোপ্লেন ইত্যাদি যানবাহনের একটা সম্পর্ক আছে। চলুন বিষয়টা একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেই। আমাদের অন্তঃকর্ণ বা কানের ভেতরের অংশ, চোখ ও শরীরের অন্যান্য অংশ দেহের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ব্রেইনে সিগন্যাল পাঠায়। যানবাহনে থাকলে সেটির গতির কারণে দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে ব্রেইনে এই সংকেত পৌছাতে বিলম্ব হয়, যার ফলে আমাদের সংবেদনশীলতার ভারসাম্য নষ্ট হয়। এই সংবেদনশীলতার সমন্বয় নষ্টের ফলে গাড়িতে উঠে বমি ভাব, মাথা ঘোরা কিংবা অস্বস্তির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এটিই মোশন সিকনেস। যেকোনো যানবাহনের ক্ষেত্রেই যাত্রা পথে এই পরিস্থিতি হতে পারে। এর ফলে দূরপাল্লার যাত্রা হয়ে ওঠে অসহনীয় ও ভীতিকর।

গাড়িতে উঠে বমি ভাব কেন হয়?

সাধারণত বাস, প্লেন বা যেকোনো বদ্ধ গাড়িতে উঠলে মোশন সিকনেস দেখা দেয়। যখন কেউ কোনো যানবাহনে চলাফেরা করেন, তখন অন্তঃকর্ণ মস্তিষ্কে খবর পাঠায় যে সে গতিশীল। তবে চোখ বলে ভিন্ন কথা। কারণ তার সামনের বা পাশের মানুষগুলো কিংবা গাড়ির সিটগুলো থাকে স্থির। এ সময় চোখ, কান ও মস্তিষ্কের এই পরস্পর বিরোধী তথ্যের ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং মোশন সিকনেস এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এছাড়া অ্যাসিডিটি, অসুস্থতা, গাড়ির ধোঁয়া বা গাড়ির বাজে গন্ধের কারণেও গাড়িতে বমি হতে পারে।

গাড়িতে উঠে বমি ভাব কেন হয়

মোশন সিকনেস এর লক্ষণ

মোশন সিকনেস এর লক্ষণের তীব্রতা ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • প্রথম ও সব থেকে পরিচিত উপসর্গ হলো বমি বমি ভাব। সংবেদনশীলতার মাত্রা অতিরিক্ত হলে যাত্রা শুরুর সাথে সাথেই বমি শুরু হয়ে যায়।
  • মাথা ঘোরা ও হালকা মাথা ব্যাথা।
  • অতিমাত্রায় ঠাণ্ডা ঘাম বের হওয়া।
  • প্রচন্ড ক্লান্তিভাব থাকে যা যাত্রা শেষেও অনেক সময় ধরে বজায় থাকে।
  • মুখ ও ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

কাদের বেশি হয় মোশন সিকনেস?

  • ২ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ব্রেইন ডেভেলপিং পর্যায়ে থাকে। এদের মধ্যে সংবেদনশীলতার আসামঞ্জস্যতার হার বেশি। তাই এই বয়সের শিশুদের মধ্যে মোশন সিকনেস বেশি দেখা যায়।
  • মহিলাদের মধ্যে মোশন সিকনেস এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তাছাড়াও মাসিকের সময়, গর্ভাবস্থায় বা জন্ম নিয়ন্ত্রক বড়ি সেবন করলে মোশন সিকনেস বেশি দেখা যায়।
  • যাত্রার সময় কোনো কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন বা স্ট্রেসড থাকলে মোশন সিকনেস হতে পারে।
  • মাইগ্রেন আছে এমন ব্যক্তিদের মোশন সিকনেস বেশি হতে দেখা যায়।
  • যানবাহনের মধ্যে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা দুর্বল হলে বা বেশি ঠাসাঠাসি করে বসতে হলে অস্বস্তি ভাব বা বমির মাত্রা বেশি হতে পারে।

গাড়িতে উঠে বমি ভাব কমাতে যা করবেন

প্রতিরোধে যা করবেন

গাড়িতে উঠে বমি ভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই। তবে এই কৌশলগুলো মেনে চললে অপ্রীতিকর এই অবস্থা থেকে কিছুটা নিস্তার পাওয়া যায়।

  • বমি নিরসনে যাত্রা শুরুর আগে এন্টি মাসকারিনিক জাতীয় ঔষধ সেবন করা যেতে পারে যা ব্রেইনের বমি উদ্রেককারী সিগন্যালকে ব্লক করে দেয়। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামে এই ঔষধগুলো পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় সেবনে বমি ভাব অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • গাড়িতে সামনের দিকে বসার চেষ্টা করুন। পেছনের দিকে বসলে গাড়িকে বেশি গতিশীল মনে হয়।
  • সম্ভব হলে জানালার পাশে বসুন। জানালা খোলা রাখুন এবং বাইরের বাতাস ভেতরে আসতে দিন।
  • গাড়িতে ওঠার আগে হালকা কিছু নাস্তা খেতে পারেন। একটি বিষয় মনে রাখবেন, কখনো খালি পেটে ভ্রমণ করা উচিৎ নয়, এতে অ্যাসিডিটির ফলে বমি ভাব বেশি হতে পারে। আবার ভ্রমণের আগে খুব বেশি খাবার খেতে যাবেন না। যাত্রাপথে যত কম খাবেন ততই ভালো। তবে পরিমিত পরিমাণে পানি পান করা উত্তম।

গাড়িতে উঠে বমি ভাব কমাতে যা খাবেন

  • বমি ভাব দূর করার জন্য আদা, লেবু, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেঁতুল চাটনি, আচার, কমলা বা টকজাতীয় যে কোনো ফল খেতে পারেন যাত্রা পথে। এতে বমিভাব কাটবে।
  • লেবু পাতাও সাথে রাখা যেতে পারে। লেবু পাতার সুঘ্রাণ বমি ভাব দূর করে দিবে।
  • নিজের পছন্দের ফ্লেভারের চুইংগাম বা লজেন্স খেতে পারেন। এতে বমি ভাব হবে না।
  • মনের জোর বৃদ্ধি কারুন। বমি করার কথা চিন্তা করবেন না, এতে বমির ট্রিগার হতে পারে। মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর জন্য ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন বা শুনতে পারেন পছন্দের কোনো গান।
  • বয়ষ্ক নারী ও গর্ভবতী নারীদেরকে যাত্রাকালের পথে বিশেষ যত্নে রাখতে হবে।
  • নিজস্ব গাড়িতে যাত্রা করলে কিছুক্ষণ পর পর ছোট ছোট যাত্রা বিরতি নিতে পারেন। কারণ বাইরের খোলামেলা বাতাসে দেহ ও মন সতেজ হলে বমি ভাব কাজ করে না।

লেখার শেষে সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, মোশন সিকনেস বা গাড়িতে উঠে বমি ভাব একটি খুবই সাধারণ কিন্তু অপ্রীতিকর অবস্থা। তবে সাধারণ কিছু কৌশল ও নিয়ম মেনে চললে এ পরিস্থিতি এড়িয়ে দূরপাল্লার যাত্রা আনন্দময় করে তোলা সম্ভব। সবাই ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন।

ছবিঃ সাটারস্টক

The post গাড়িতে উঠে বমি ভাব? জানুন এর কারণ ও প্রতিরোধের উপায় appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/rlZwd8W
via IFTTT

Post a Comment

Previous Post Next Post